বেস্ট রোমান্টিক গল্প

বেস্ট রোমান্টিক গল্প

 

 প্রিয় পাঠক, সবাই কেমন আছেন. আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন ।আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি বেস্ট রোমান্টিক গল্প। অনেকে ইন্টারনেটে সার্চ করে ভালো গল্প খুঁজে পান না, তাদের জন্যই আজকের এই গল্পটি। আশাকরি মনোযোগ সহকারে গল্পটি করবেন, তাতে আপনাদের ভালো লাগবে। 

 

তোমার ছেলের বউয়ের পেটে লাথি মারতে পারলে না মা?”

আমি ডাইনিং টেবিলে বসে শুনছিলাম আমার আপু এবং মায়ের কথপোকথন। আপু আজ সকালেই আমাদের বাসায় এসেছে। এসে ভাবীকে দেখতে না পেয়েই তার মাথায় যেনো বজ্রপাত পরলো। আরো তার মেজাজ খারাপ হলো ভাবীকে নিয়ে ভাইয়া ডাক্তারের কাছে গিয়েছে শুনে। ভাবীকে ভাইয়া বিয়ে করার পরে প্রায়ই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।

ভাবী একটু রোগা টাইপের। সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যায়। তার শরীরে নানা ধরনের ব্যধি আছে। এই ধরেন, হুটহাট তার মাথা ব্যথা হয়। তারপরে অজ্ঞান হয়ে পরে। মাঝে মাঝে সে বমি করে। আরো নানা সমস্যা আছে।

গতমাসে আমরা জানতে পারি ভাইয়া ভাবীর সংসারে নতুন অতিথি আসতে চলছে। খবরটি শুনে মা বড্ড খুশি। কিন্তু গতকাল আমরা জানতে পারি মিসক্যারেজড হয়েছে। সেই না যেনো মা খুব রেগে গেলো। অকথ্য ভাষায় যেভাবে পেরেছে মা বকেছে।

আজকে মা আর আপু যেহেতু একসাথ হয়েছে, ভাবী বাসায় আসলে আজ তার অনেক কথাই শুনতে হবে। আমি তো পরিবারের ছোট ছেলে আমি কিছুই বলার সাহস রাখি না। আপু আমাদের দুই ভাইয়ের বড়। তার কথার উপরে আমরা দুই ভাই কিছুই বলি না। সে যা বলে না কেনো আমরা চুপচাপ শুনে যাই। আর মায়ের কাছে এই ব্যপারে কিছু বলাও যায় না। তাকে কিছু বললে মুখের দিকে তাকানো যায় না। আমাদের সাথে কথাও বলে না ঠিকঠাক মতো।

সন্ধ্যায় পরে ভাইয়া এবং ভাবী আসলো। আমার আপু পায়চারি করতে লাগলো। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম তার মন ভীষণ খারাপ। আর ভাবী ফুঁপিয়ে কান্না করছে। বুঝতে পারছি রিপোর্ট পজিটিভ আসেনি। কিন্তু মা এবং আপুর মেজাজ খুব খিটখিটে। ভাইয়া রুমে আছে বলে আপুও তাদের রুমে যেতে পারলো না। তারা দুজনের কেউই রাতের খাবার খেলো না। আমি ভাইয়া এবং ভাবীর কথার ধাজ দেখে বুঝতে পারলাম, ভাবীকে ভাইয়া সান্ত্বনা দিয়েছে। কিন্তু মা আর আপুর সামনে কিছু বলতে পারছে না।

আমি ভার্সিটির ছুটিতে বাসায় বেড়াতে এসেছি। বাসায় এসেও আমার মন ভালো নেই। পারিবারিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম কালই বাসা থেকে ভার্সিটিতে চলে যাবো। এভাবে পারিবারিক অবস্থা দেখা যায় না।

সকালে ভাবী কিচেনে চলে গেলো। রান্নাবান্না শেষ করার পরে আমরা সবাই ডাইনিংয়ে বসেছি নাস্তা করতে। সেই মুহুর্তে আমার আপু বলে উঠলো…

– এই মিলি তুমি কি আমার ভাইয়ের সংসারটা ধ্বংস করতে আসছো?

একটা দিনও তো শুনি না তুমি সুস্থ আছো। তোমার বাবা-মা তো আমাদের ঠকিয়েছে। তুমি যে এমন রোগা টাইপের তা তো বিয়ের আগে কখনোই বলেনি। গত মাসে তুমি আমাদের সুসংবাদ দিলা সেটাও তো ধরে রাখতে পারলা না। নষ্ট হয়ে গেল পেটের বাচ্চাটা। তোমার কি লজ্জা করে না এভাবে এই সংসারে থাকতে? তোমার পেছনে আমার ভাইয়ের সব টাকা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার ভাইয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে বুঝতে পারছো তো? 

ভাবী একদম চুপচাপ, আর ভাইয়া প্লেটে খাবার নড়াচড়া করছে। আপু একটু থেমে গিয়ে আবারো বললো..

– তুমি বরং তোমার বাবার বাড়িতে চলে যাও। সেখানে গিয়ে তুমি সুস্থ হও। তোমার বাবা মাকে বলো তোমাকে যেন ডাক্তার দেখায়। পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হওয়ার পরে তুমি এই বাসায় আসো। তোমার তো দেখছি কোন যোগ্যতা নেই। বাচ্চাটাকে তুমি ধরে রাখতে পারলে না। আমার ভাই চুপচাপ করে থাকলেও আমরা তো আর চুপচাপ করে থাকতে পারবো না তাই না? তাই আমি বলছি কি তুমি তোমার বাবার বাড়িতে চলে যাও।

ভাইয়া খাবার রেখে উঠে চলে গেলো। ভাবীও কিছু বললো না। আমি মাকে নরম সুরে বললাম…

– মা এই সংসারটা ভাইয়ার। কিন্তু তাদের সংসারে তুমি এবং আপু নাক গলাচ্ছো। সমস্যা কি তোমাদের? ভাবীর অসুস্থতা নিয়ে ভাইয়ার তো কোন সমস্যা ছিল না। ভাইয়া তো কিছু বলেনি? সেতো ভাবীর উপরে রাগ দেখায় নি। কিন্তু তোমাদের সমস্যাটা কি? এখানে তোমরা কেন এমন করছো তার সাথে। তোমাদের কিছু বলতে না পেরে ভাইয়া এই রাগ টা যদি ভাবীর সাথে দেখায় তাহলে মেয়েটা কোথায় যাবে বলো তো? জেনে বুঝে নিজের ছেলের সুন্দর সংসার টায় অশান্তি কেন সৃষ্টি করছো?

তোমার মেয়ে তোমাকে যে পরামর্শ দেবে তুমি সেটাই করবে? তোমরা দুজন কি শান্তভাবে থাকতে পারো না?

– দেখছো মা তোমার ছেলে মুখের উপরে কথা বলে। ও বিয়ে করলে তো আমাদের পরিচয়’ই দিবে না।

– হ্যাঁ আপু। তুমি ঠিকই ধরেছো। তোমরা যদি এমন আচরণ করো তাহলে আমারও তো তোমাদের সাথে এমন আচরণ করতে হবে তাই না? ভাইয়া তোমাদের সমস্ত কথা শুনে যায় কোন প্রতিবাদ করেনা। আমি তো আর ভাইয়ার মত না।

ভাবী যখন অসুস্থ হলো তখন  তুমি তো ভাবীকে সাহায্য করতে পারতে। অসুস্থতা নিয়েও বাসায় রান্না-বান্না সহ সমস্ত কাজ করেছে। কই তখন তো তোমাদের কোন ভাবনা ছিল না। যে মেয়েটা অসুস্থ, প্রেগনেন্ট এখন কি করে কাজ করবে? বাসায় বাকি যারা আছে তাদের সমস্ত কাজ করা উচিত। কই এটাতো কখনো ভাবোনি। সব সময় ভাবীর ঘাড়েই তোমরা দোষ চাপিয়ে দিচ্ছো। আর আপু তুমিও তো একজনের সংসার করো তাই না? তোমাকে যদি তোমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এরকম আচরণ করে তাহলে তোমার কেমন লাগবে? তোমরা মেয়েরা শুধু বাবার বাড়িতে এসেই এরকম আচরণ করতে পারো। নিজের সংসারে এরকম কেউ আচরন করলে সেখানে আর কোন কিছু বলতে পারোনা। আপু তোমরা ভুলে গেলে হবে না ভাইয়ার একার ইনকামে কিন্তু এই সংসার টা চলছে।  দুবেলা ভাত খেতে পারছো বেড়াতে এসে । তোমাদের সমস্ত কথা ভাইয়া শুনে যায়। কিন্তু কিছুই বলে না। কেন জানো? ভাইয়া যদি বাজে ব্যবহার করে কিংবা তোমাদের কথায় প্রতিবাদ করে, তোমাদের খারাপ লাগবে। ভাবীকে যদি কিছু বলো তখন কিন্তু ভাইয়ার খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু কোনো জবাব দিতে পারে না। অথচ তোমরা জানোই না যে অন্যের মেয়েকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজের ছেলেটাকেও কষ্ট দিচ্ছো। মা তোমার যদি এতই সমস্যা তোমার মেয়ের কান পরামর্শ ভালো লাগে তার কাছে চলে যাও।

আর আপু ভালো কথা। ভাইয়ার সংসার নিয়ে কখনো নাক গলাবে না। ভাবীকে যদি কিছু বলার থাকে তাহলে সেটা ভাইয়া বলবে। ভাবী যদি কোনো ভুল করে থাকে সেই ভুলটা তোমরা ধরিয়ে দিতে পারো, ভুল শুধরে দিতে পারো। এভাবে ছোট করার রাইট কিন্তু তোমাদের নেই। সে একজন মানুষ তার ভুল হবে, বুঝে না বুঝে অনেক ভুলই করবে। তারপরেই তো শিখবে তাই না? এমন শাশুড়ী আর ননদ হও যাতে সে খারাপ হলেও তোমাদের ভালোবাসতে বাধ্য হয়। । বেড়াতে আসছো ভালো কথা,কিন্তু এভাবে আচরণ করতে আসবে না। মন মানসিকতা পরিবর্তন করো।

আমি দেখলাম আমার কথা গুলো আপুর ভালো লাগলো না। কাপড় চোপড়ের ব্যাগ নিয়ে আপুর ছেলেটাকে নিয়ে সে চলে গেলো। হয়তো রাগ কমে গেলে ভুল টা বুঝতে পারবে। নয়তো কখনোই বুঝবে না।

 

শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আশাকরি গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এরকম আরো বেস্ট রোমান্টিক গল্প পেতে সবসময় আমাদের সাথেই থাকুন। গল্পটি ভাল  লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।