বেস্ট রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
প্রিয় পাঠক, সবাই কেমন আছেন ।আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আপনারা অনেকেই আছেন যারা ইন্টারনেটে বেস্ট রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলো সার্চ করে থাকেন। তাদের জন্য আজকে পোস্ট টি মূলত। মনোযোগ সহকারে পোস্ট পরলে অবশ্যই আপনাদের ভালো লাগবে।
বেস্ট রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
বড় আপার মৃত্যুর এগারো দিনের মাথায় আমাকে আপার শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হলো।আপার অসুস্থ শ্বাশুড়ি আর দুই বছরের অদ্রি কে দেখে রাখার জন্য।সত্যি বলতে আপার প্রতি তেমন ভালোবাসা আমার কখনোই ছিলোনা।ছোটবেলা থেকে কেমন হিংসার চোখে দেখতাম।আপা আমার থেকেও সুন্দরী,স্মার্ট আর ব্যাবহারেও ভালো।অন্যদিকে আমি সুন্দর কিনা জানিনা,তবে প্রচন্ড একগুঁয়ে সেটা নিজেই বুঝি।তার চেয়ে বেশি যন্ত্রনা পেতাম অর্ণব ভাইকে নিয়ে।আমাদের কাজিন।যে পুরুষকে বুঝ হবার পর থেকে মন থেকে চাইতাম,তাকে নিজের আপন বোনের হতে দেখার মতো যন্ত্রনা আমি সহ্য করেছি।
এর জন্য আপাকেই আমি দায়ী করতাম।কিন্তু আজ সে মানুষটা নেই তা আমি মেনে নিতে পারছি না।মাঝে মাঝে মনে হয় ফিরে এসে বলবে ‘এই নিতু?রাগ করেছিস?কি হয়েছে আমাকে বল।’
আমি কান্না ভেজা চোখে আপাকে খুজি।কখনো অদ্রির মধ্যে।আপার চেহারাই পেয়েছে পুরো।অদ্রি জানে না তার মা আর দুনিয়াতে নেই।সে জানে আমি তার মা।প্রতিনিয়ত আপার স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।এই সংসারের প্রতিটা সাজানো বস্তু,চারদিকের দেয়ালটাই যেনো আপার স্মৃতি ধরে রেখেছে।আমার যেনো কোনো স্থান নেই এখানে।
আর অর্ণব ভাই!!সেতো পুরো নিরুদ্দেশ এর মতোই।সপ্তাহে দু একবার বাড়ি আসে।কোথায় থাকে কেউ জানে না।সুন্দর চেহারাটা এখন পুরো নেশাখোরদের মতো হয়ে থাকে।এসে শুধু অদ্রিকে দেখবে।পাগলের মতো তাদের বেডরুমের দরজা বন্ধ করে আপার জামাকাপড় বের করে এলোমেলো করবে।কখনো কান্না করবে।সবশেষে বেলকুনিতে একগাঁদা সিগারেট টেনে ময়লা করে মাঝরাতেই আবার চলে যাবে।আর আমার কাজ আবার সেগুলো গুছিয়ে রাখা।
আপা আর আমার চেহারা প্রায় একইরকম।বয়সে শুধুমাত্র একবছরের ব্যাবধান ছিলো।তার শ্বাশুড়ি তো ভুল করে বারবার আমাকে আপার নাম ধরে ডেকে ফেলেন।আমিও জবাব দেই মাঝে মাঝে।তখন হাসি মুখে ক্ষমা চাইলেও তার চোখ বলে দেয় তিনি আপাকে কতোটা ভালোবাসতেন।এমন স্বামী শ্বাশুড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
অর্ণব ভাইয়ের প্রতি ফিলিংস আমার কখনোই কমে নি।এ বাড়িতে এসে যতোবারই কথা বলতে যাই উনি এড়িয়ে যান।তিন মাস এভাবেই কেটে গেলো।এখান থেকেই কলেজ এটেন্ড করছি।অদ্রির দেখাশোনা,নিজের পড়া এভাবেই দিন চলে যায় আমার।অর্ণব ভাই এখনো আগের মতোই।মন চাইলে আসেন অদ্রি কে দেখে আবার চলে যান।
সেদিন সন্ধ্যায় আপার রুমে যাই আমি।মাঝে মাঝেই যাই।আলমারির আয়নায় নিজেকে যেনো অন্যরকমভাবে খুজে পাই আমি।খুলে আপার একটা শাড়ি বের করে পড়ি।আয়নায় দেখে যেনো নিজেকেই চিনতে পারছি না।হঠাৎ করে পেছন থেকে অর্ণব ভাই এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,,”মিতু।আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে তুমি।আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে।সেদিন বিকেলে কোনো কথা বলোনি কেনো?”
আমি চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছি।দাঁড়িয়ে থাকতেই ইচ্ছে হলো।আমার ভেতরে অন্য এক সত্তা কাজ করছে।গলা কাপছে আমার।হুশ আসতেই বললাম,”দুদ দুলাভাই!আ আমি নিতু।”
হুট করে বন্ধন আলগা করে দিলেন।কোনো রকম স্যরি বলেই বেড়িয়ে গেলেন তিনি।বুঝলাম তিনি হ্যালুসিনেশনে ভুগেন।আমি শাড়ি খুলিনি আর।অদ্রিকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছি,বাচ্চা মেয়েটা আমার বুকেই এসে ঘুমিয়ে গেছে।আমারও চোখে ঘুম লেগে আসছে।হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাদের দেখছে।দরজায় তাকিয়ে দেখি অর্ণব ভাই একনজরে আমাদের দেখে যাচ্ছেন।আমি তারাতারি উঠে মাথায় কাপড় দিয়ে বললাম,,”দুলাভাই আসবেন?”মাথা ঘুরিয়ে না বুঝিয়ে চলে গেলেন তিনি।
বাসার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে।অর্ণব ভাই আবার সংসারে মন দিয়েছেন।কিছু লাগলে টুকটাক জিজ্ঞাসা করেন।আমিও কেনো যেনো এই সংসারের মধ্যে নিজেকে গেঁথে নিয়েছি।
সাত মাস হতে চললো।সকালে অর্ণব ভাই এলেন।মন খারাপ মনে হচ্ছে উনার।এসেই বললেন,”নিতু।আজ দুপুরের আগে রেডি হয়ে থেকো।তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে তোমায়।”
আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পরলো!আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।এই পরিবার,সংসার,অদ্রিকে ছেড়ে আমি কীভাবে থাকবো!অসম্ভব আমার পক্ষে।কিন্তু বাবার কথা ফেলে দেয়ার সাধ্য বা সাহস আমার নেই।
অদ্রিকে নিয়েই বেড়িয়ে গেলাম।আপাদত আমার কাছেই থাকবে।বিকেলে পাত্র এসে আমাকে পছন্দ করে গেলো।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো।আমি দোটানায় পড়ে আছি।আমি ছাড়া অদ্রির কি হবে।বিয়ের আগের দিন রাতে হঠাৎ অর্ণব ভাই এলেন।একটা প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই,,
“এখানে একটা বিয়ের শাড়ি আছে।মিতুর বিয়ের শাড়ি।আমি চাই তুমি এটা পড়ো।আরো কিছু চুড়ি,গহনা আছে।এসব তোমার প্রাপ্য।আমার পরিবারটাকে দেখে রাখার জন্য ধন্যবাদ।নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”
সেদিন সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি।কোন হতচ্ছাড়া যেনো এসে অদ্রিকে বলেছে “তোমার মা কে আজ নিয়ে যাবে।তখন তার সে কি কান্না।আমি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।আমাকে সাজানো হয়েছে।আপার শাড়িটা পড়েছি।কিন্তু আমার বুকে রক্তক্ষরণ যেনো থামছেই না।মা এলেন।আমাকে দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন,” তোকে পুরো মিতুর মতো লাগছে রে।ভালো করে সংসার করিস মা।”
আমি মাকে কাছে ডাকলাম।মনের কথাগুলো সব খুলে বললাম।মা সায় দিলেন কিন্তু বাবা কখনোই রাজী হবেন না।আমার আর কিছু করার নেই।বিয়ের শাড়ি পরেই ঘুমন্ত অদ্রিকে কোলে করে বেড়িয়ে গেলাম।পেছনে সব ফেলে এসেছি।যা হবার হোক।আমার বাড়ি থেকে অর্ণব ভাইদের বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।ফোন সুইচড ষ্টপ করে রেখেছি।অদ্রিকে কোলে করে বাসায় ঢুকলাম।আমি জানি তিনি এখন কই।অদ্রিকে শুইয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বেলকুনির দিকে যাচ্ছি।সিগারেটের প্রচন্ড বিদঘুটে গন্ধ আমার নাকে বিধছে।পেছন থেকে ডাক দিলাম,”অর্ণব ভাই”
তড়িঘড়ি করে উঠে চোখ মুছে আমার দিকে ফিরলেন।কিছুক্ষন তাকিয়ে বললেন,”মিতু?”
আমি বললাম,না আমি নিতু।
-তুমি এখানে কেনো?বিয়ে শেষ হয়নি?
“না হয়নি।”
-কেনো?
“কারণ আমি বিয়ে করতে পারোনি।তাই চলে এসেছি।”
-কেনো বিয়ে করতে পারোনি।কিছু হয়েছে?
“কারণ আমি আপনাদের ভালোবাসি।আপনি,অদ্রিকে ছাড়া আমার বেচে থাকা সম্ভব না।”
-দেখো নিতু।তোমার বুঝা উচিত।তুমি অবিবাহিত।পাগলামি না করে ফিরে যাও।অদ্রির জন্য বেবিসিটারের ব্যাবস্থা করে রেখেছি আমি।তুমি ভুল যায়গায় এসেছো।
“আমার কাছে কোনো ঠিক ভুল নেই।আমি অদ্রির মা হয়েই থাকতে চাই।আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না প্লিয।”
-পাগলামি করো না প্লিয।আমি মিতুর যায়গাটা কখনোই কাউকে দিতে পারবো না।আর অদ্রির কথা বলছো।আমিই ওকে দেখে রাখতে পারবো।
“ও আচ্ছা।তাই বুঝি।আমাকে আর দরকার নেই।ঠিক আছে।আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না তো?আমি চলে যাচ্ছি।তবে বাড়িতে না আমি এখনি রাস্তায় গিয়ে নিজেকে গাড়িচাপা দিবো।” বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলাম।চার বছর আগেও এই মানুষটাকে বাবার কাছে চেয়েছিলাম,বাবা দেয়নি আমাকে।আজ উনি নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।আমাকে কেউই চায়না।বেচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গেছে।
দৌড়ে এসেছি রাস্তার ধারে।বড় একটা ট্রাক আসছে।লাফ দিতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে অর্ণব ভাই টান মেরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।কান্নাভেজা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
-এমন জেদী কেনো তুমি?তুমি বুঝোনা তুমি যতক্ষন সামনে থাকো আমার মিতুর কথা মনে পড়ে?তোমার জন্য নতুন করে বুকে যে অনুভূতির জন্ম হবচ্ছে আমি তো সেটা থেকে বাচতে চেয়েছি শুধু।
“আমি তো আপার যায়গাটা চাইনা।আমি তো চাই আপনার বুকের অন্যপাশে নিজের যায়গা করে নিতে।আমাকে নিজের করে নিন না অর্ণব ভাই।”
বন্ধন আরো শক্ত হলো।উনি আমার কপালে শক্ত করে চুমু খেলেন।আমি চোখ বন্ধ করলাম।দুনিয়ার সব শান্তি যেনো তার বুকেই এসে ভীড় করেছে।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আশা করি গল্প টি পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। এরকম আরো গল্প পেতেসবসময় আমাদের সাথেই থাকুন। আশা করি বেস্ট গল্প গুলো আপনাদের উপহার দিতে পারব। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।