রসুন খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা 

রসুন খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা 

 

প্রিয় পাঠক, আশাকরি সকলে খুব ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সামনে এমন একটা জিনিস নিয়ে হাজির হয়েছি যা দৈনন্দিন জীবনে সবার প্রয়োজন। আর আমাদের দৈনন্দিন কাজের একটা অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়  রসুন। অনেক প্রশ্ন করে থাকেন রসুন কিভাবে খেতে হয়, কিভাবে খেলে এর সুফল পাওয়া যায় এবং রসুন এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। যারা এই সমস্ত প্রশ্ন করে থাকেন, তাদের জন্য আজকের পোস্টটি মূলত। 

 আজকে আমরা রসুনের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক, 

রসুন খাওয়ার নিয়ম 

রসুন মূলত একটি মসলাজাতীয় উপাদান।  এর ঘ্রান অনেক তীব্র এবং ঝাঁজালো। তীব্র ঘ্রান যুক্ত থাকার কারণে অনেকেই এ মসলা খেতে পারে না। তাই আপনি চাইলে অনেকভাবে রসুন খেতে পারেন। তারমধ্যে তিনটে উত্তম মাধ্যম হচ্ছে,

  •  প্রথমত আপনি যদি কাঁচা রসুন খেতে পারেন সেটা হবে সবচেয়ে বেশি উপকারী।
  •  দ্বিতীয়তঃ আপনি রসুন সিদ্ধ করে খেতে পারেন, এটাও শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
  •  তৃতীয়তঃ আপনি চাইলে পানিতে ভিজিয়ে রেখে রসুনের পানি খেতে পারেন। এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। 

আরো কয়েকটি উপায় রসুন আপনি খেতে পারেন। আপনার কাছে যদি রশুন খেতে  অসুবিধা মনে হয় বা খেতে ভালো লাগছেনা তাহলে নিয়মিত তরকারির সাথে রান্না করে খেতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি উপকারী হচ্ছে কাঁচা খাওয়া। 

রসুনের উপকারিতা 

রসুন মূলত একটি মসলা জাতীয় উপাদান। সারাবিশ্বে রান্নার মসলা হিসেবে রসুন সৃষ্টির শুরু থেকে চলে  আসছে। ভালো করার জন্য রসুনের উপকার অন্যতম। সারা বিশ্বের মানুষ রান্নার পাশাপাশি রসুন কে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে আসছে। তার কারণ হচ্ছে রসুনে প্রচুর পরিমাণে ময়শ্চার, ভিটামিন, প্রোটি্‌ ফ্যাট মিনারেল ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।  ভিটামিন ও মিনারেল এর মধ্যে রয়েছে  ক্যালসিয়াম, আয়রন, থিয়ামিন ভিটামিন সি ইত্যাদি।  খালি পেটে রসুন খেলে বিভিন্ন রোগ দূর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে রসুন। চলুন জেনে নেয়া যাক রসুনের উপকারিতা।

 

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ বর্তমানে অনেক মানুষ আছেন যারা উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভোগেন। অনেক সময় অনেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েও কোন ফল  পাচ্ছে না। যার ফলে রোগীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু আপনি চাইলে প্রাকৃতিক ভাবে এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে  পারেন। আর এর জন্য আপনাকে নিয়মিত রসুন সেবন করতে হবে। কারণ উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ ভালো করতে রসুন একটি ভালো ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে । 

 

  • যক্ষা প্রতিরোধকঃ সারাবিশ্বে অনেক মানুষ আছে যারা যক্ষ্মা রোগে ভুগে থাকেন। এই যক্ষ্মারোগের পেছনে মানুষ অনেক টাকা পয়সা খরচ করে ফেলে। অথচ আপনার হাতের সামনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে চাইলে এই রোগের নির্মূল করতে  পারেন। তার কারনে এত পরিমান উপাদান আছে যে আপনার যদি যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন রোগ ধরা পড়ে, তাহলে আপনি সারাদিনে যদি একটি  রসুন কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে সারাদিন ধরে খেতে পারেন তাহলে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। 


  • প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবেঃএকজন মানুষ যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক অথবা দুই কোয়া রসুন খেতে পারে ,এটি তার শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করবে। সাধারণত খালি পেটে রসুন খেলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং তখন তা  রসুনের ক্ষমতার কাছে ব্যাকটেরিয়াগুলো হেরে যায় ।যার ফলে শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সমূহ থাকতে পারে না।

 

  • যৌনতা বৃদ্ধিঃ যৌনতা বৃদ্ধি করণে রসুনের উপকারিতা অপরিসীম। তার কারণ হচ্ছে আপনি যদি নিয়মিত করে প্রতিদিন সকালে এক কথা দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন তাহলে যৌনতা বৃদ্ধি অবশ্যই পাবে। যাদের বয়স হয়ে গেছে তাদের যৌবন শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে  রসুন। আপনি চাইলে ঘি এর সাথে ভেজে রসুন খেয়ে নিতে পারে এতে করে আপনার যৌবন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। যৌবন রক্ষার জন্য আরো বিভিন্ন উপায় ঔষুধ সেবন করা যায়। 

 

  •  হজমের সমস্যা মুক্তিঃঅনেক মানুষ আছে যাদের হজমে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। খাবার খাওয়ার পর ঠিকমতো হজম হয় না। তাদের জন্য বেস্ট উপায় হচ্ছে এই  রসুন। আপনি চাইলে দিনে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন কুচি করে সামান্য ঘিয়ে ভেজে সবজি সাথে অথবা এমনি খাওয়ার অভ্যাস করলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 


  • ঠান্ডা ও জ্বর সারাতেঃমানুষের প্রায়শই একটা সমস্যা হচ্ছে জ্বর ঠান্ডা। সচরাচর মানুষ এই সমস্যায় পড়ে যায়। আরে সমস্যার সমাধান থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনি চাইলে দিনে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন কাচা খেয়ে ফেলতে  পারেন। 

 

এছাড়াও রসুনের অনেক উপকারিতা দিক রয়েছে যা বলে শেষ করা সম্ভব না। অনেক রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। সারা বিশ্বের মানুষ অনেক কাজে ব্যবহার করে  থাকে।

 

রসুনের অপকারিতা

মোটামুটি যেসব জিনিসের উপকারিতা রয়েছে সেসব জিনিস এর  অপকারিতা ও রয়েছে। তার মধ্যে রসুন ব্যাতিক্রম নয়। রসুন যেমন  উপকারী তেমনটা ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত কোনো কিছুই সেবন করা ভালো না। তার জন্য দিনে দুই কোয়া রসুনের উপর খাওয়া যাবেনা । অনেকে যারা আছে রসুন খেলে এলার্জি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাদের অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। রসুন খাওয়ার ফলে অনেকের মাথা ব্যথার সমস্যা বমির ভাব বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাদের জন্য কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভালো।

অনেকে আছে  যাদের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না তাদের জন্য অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই ভালো। তার কারণ হচ্ছে, রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে থাকে। আবার অনেকে আছে রসুন খেলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ দেখা দেয় , সে ক্ষেত্রে খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর পাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর যন্ত্রণার কারণ ঘটাতে পারে।  

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসুনের মধ্যে থাকা এলিসিন  এসিড যকৃতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষ করে যাদের পেটে গ্যাস বেশি  তাদের রসুন খাওয়া উচিত। কারণ রসুন পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। যার ফলে বুক জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে  পারে।

 

শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আশা করি রসুনের উপকারী ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এটি কিভাবে সেবন করলে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যাবে তা পোস্ট  এ আলোচনা করা আছে। আশা করি পোস্টটি সবার মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং নিজে উপকৃত  হবেন। তার আমাদের জানাতে ভুলবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।