রূপচর্চায় রসুনের ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি রূপচর্চায় রসুনের ব্যবহার নিয়ে। রসুনের অনেক ধরনের ব্যবহার রয়েছে তার মধ্যে একটি রূপচর্চার ব্যবহার। চলুন জেনে নেয়া যায় কি কি ব্যবহার রয়েছে রসুনের।

ত্বক ও চুলের যত্নে রসুনের অসাধারন ব্যবহার
রসুন সাধারনভাবে মসলা হিসেবে ব্যবহার হলেও রসুনের উপকারিতা সকল ক্ষেত্রে রয়েছে। এই রসুন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওষধি হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হার্ট সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত রসুনের ভূমিকা রয়েছে। আপনি হয়ত অবাক হবেন রূপচর্চায় রসুনের বিরাট গুরুত্ব। ত্বকের যত্নে রসুনের জুড়ি নেই। ব্রণ এবং ব্রণের দাগ নিমিষে দূর করে দিতে পারে রসুন। শুধু ত্বক থেকে ব্রণ দূর করে না। রসুন ত্বকের যে কোন সমাধানে বেশ উপকারি। চুলের যত্নেও রসুনের রয়েছে বড় গুণ। রসুনে বিদ্যমান জিঙ্ক এবং কপার মাথার তালুর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং খুশকির সমস্যা দূর করে দেয় চিরতরে। ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আজ রসুনের এমন কিছু ব্যবহারের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব । চলুন তাহলে জেনে নেই ত্বক ও চুলের যত্নে রসুনের ব্যবহার।

ত্বকের যত্নে রসুনের গুনাগুন

১। বয়সের ছাপ দূর করনে

রূপচর্চায় রসুনের ভূমিকা রয়েছে অনেক স্থান জুড়ে। বয়সের ছাপ দূর করতে পাঁচ কোয়া রসুন কুচি করে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট এর সাথে এক টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখ ভাল করে পরিষ্কার করে মিশ্রন পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে দিতে হবে। এবার ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। আর রসুনে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করবে। টকদই ত্বক ময়েশ্চার করে। সুতরাং রসুন ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে অনেক উপকারি।

২। হোয়াট হেডেস এবং ব্ল্যাক হেডস দূর করনে

দুই তিনটি রসুনের কোয়া কুচি, এক চা চামচ ওটমিল, দুই তিন ফোঁটা টি ট্রি অয়েলের সাথে আধা চা চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এটি পাতলা করে ভেজা মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পর ত্বক এক্সফলিয়েট করতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। রসুন কঠিন হোয়াইট হেডস এবং ব্ল্যাক হেডস দূর করে দেয় নিমিষে।

৩। ব্রণ সারাতে

ব্রন সারাতে তো রসুনের অবদান অসাধারণ। ব্রন সারাতে প্রথমে দুই তিনটি রসুনের কোয়া থেকে রস বের করে নিতে হবে। রসুনের রসের সাথে এক কাপ কুসুম গরম পানি মিশিয়ে। এবার একটি তুলোর বল মিশ্রণটিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর বলটি দিয়ে ব্রণের স্থানে ঘষতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। রসুনের অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান দ্রুত ব্রণ দূর করে দিবে।

৪। স্ট্রেচ মার্ক দূর করনে

স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে কুসুম গরম তেলের ম্যাসাজের জুড়ি নেই। রসুন কুচি তেলে দিয়ে গরম করতে হবে। এই তেলটি স্ট্রেচ মার্কে ম্যাসাজ করতে হবে। রসুনের জুসের পরিবর্তে রসুনের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রসুন রাখলে ভাল হয়। রসুনের অ্যালাসিন এবং সালফার ত্বকের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে কীভাবে রসুনের প্যাক ব্যবহার করবেন আসুন জেনে নেওয়া যাক।

১। চুলের যত্নে রসুন এবং তেল

তেল এবং রসুন নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এমনকি মাথার তালুর ইনফেকশন এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে এই রসুনের তেল। এক টেবিল চামচ রসুনের রসের সাথে আধা কাপ নারকেল তেল মিশিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিতে হবে। কুসুম গরম হয়ে আসলে এটি মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। এক ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় এটি চুলে রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।

২। চুলের যত্নে রসুনের রস

রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে রস করে নিইয়ে। এটি সরাসরি মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। গোসলের আগে চুলে এটি লাগিয়ে নিতে হবে। কিছুসময় এটি মাথায় রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন।

৩। চুলের যত্নে কাঁচা রসুনের সিরাম

চুল পড়া রোধের একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি হল কাঁচা রসুনের সিরাম। রসুনের তেলের সাথে এক টেবিল চামচ কাঁচা রসুনের রস মিশিয়ে নিতে হবে। এবার একটি তুলোর বলে সেটি লাগিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। কয়েক মিনিট মাথার তালু ম্যাসাজ করে। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। ভাল ফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতিরাতে ব্যবহার করতে হবে।

৪। চুলের যত্নে রসুন এবং অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলের বোতলে এক টুকরো রসুন দিয়ে রাখতে হবে। এটি এভাবে এক সপ্তাহ রাখতে হবে। এরপর প্রতিদিন রাতে এই তেল চুলে ব্যবহার করতে হবে। পরের দিন সকালে চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

৫। চুলের যত্নে রসুনের কন্ডিশনার

রসুনের কোয়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে। তারপর এটি গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করতে হবে। এবার কন্ডিশনার সাথে রসুনের পাউডার মিশিয়ে নিয়ে। এটি চুলে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে এতে রসুনের রসও মেশাতে পারেন। এটি চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে।

৬। চুলের যত্নে রসুনের প্যাক

রসুনের সেলিনিয়াম যখন ভিটামিন ই এবং ডিমের প্রোটিনের সাথে মিশে চুলের পড়া রোধ করে করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। একটি ডিমের সাদা অংশ ভাল করে ফাটিয়ে নিয়ে এরসাথে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং এক টেবিল চামচ রসুনের রস মিশাতে হবে। এবার প্যাকটি চুলে ভাল করে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। ভাল ফলাফল পেতে সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে হবে। এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

৭। চুলের যত্নে রসুন ও অ্যালোভেরা প্যাক

এক টেবিল চামচ রসুনের রসের সাথে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এবার এই প্যাক চুলে ও মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এবার ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি মাথার ত্বকের সংক্রমণজাতীয় সমস্যার সমাধান করবে এবং খুশকি দূর করবে।।

৮। চুলের যত্নে রসুনের সাথে পেঁয়াজের রস

প্রথমে রসুন ব্লেন্ড করে এর রস বের করে নিতে হবে। এবার এর সাথে সমপরিমাণে পেঁয়াজের রস মেশাতে হবে। একটি তুলার বলে এই রস নিয়ে মাথার তালুতে লাগিয়ে। হাতের আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ মাথার তালু ম্যাসাজ করতে হবে। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে। ভালো ফল পেতে চাইলে এই রস নিয়মিত মাথায় ব্যবহার করতে হবে।

শেষ কথা- প্রিয় পাঠক, রূপচর্চায় রসুনের গুনাগুন ও কার্যকারিতা পোস্টের উপরে আলোচনা করেছি। এরপরও যদি আরো কিছু জানার থাকে আমাদের কমেন্ট করতে ভুলবেন না। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।