ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ডেঙ্গু জ্বরের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে। অনেকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানেন না। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করনীয় কিভাবে এর সঠিক চিকিৎসা নিতে হয় এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের পোস্ট । আশাকরি মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাতে উপকৃত হবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক,
ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ৷ এটা এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু রোগীর থেকে সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়৷ এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের মশার সমস্ত শরীরে আছে সাদাসাদা ডোরাকাটা দাগ৷এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়৷বেশিরভাগ ডেঙ্গু হয় বর্ষার সময়৷এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।
ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হতে পারেঃ
- ক্লাসিক্যাল জ্বর এবং
- হেমোরেজিক জ্বর
ক্লাসিক্যাল জ্বর
লক্ষণ
- তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি, জ্বর ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠতে পারে৷
- মাথাব্যথা
- মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা
- গলা ব্যথা
- খাওয়ায় অরুচি
- বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া
- জ্বর শুরু হওয়ার তিন চার দিন পর ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়৷
হেমোরেজিক জ্বরঃ এটি ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা। এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণ ঘটে ৷ এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে৷
লক্ষণ
- জ্বর ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে৷
- তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি
- মাথা ব্যথা
- মাংস পেশি এবং গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা
- গলা ব্যথা
- খাওয়ায় অরুচি
- রক্ত বমি
- ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
- পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
- রক্তের চাপ কমে যায়
- লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়
- চোখ লাল হয়ে যায়
- নাড়ীর গতি বেড়ে যায়
- রোগীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়
- পেটে তীব্র ব্যথা হয়
- রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে
ডেঙ্গু থেকে কী জটিলতা হতে পারেঃ
- নিউমোনিয়া
- অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হওয়া
- চোখের প্রদাহ
- অণ্ডকোষের প্রদাহ
- ডিম্বাশয়ের প্রদাহ
- শক
- রক্তপাত
- রক্তশূন্যতা
প্রতিকারঃ রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে৷ রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে৷ ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় ৷ হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে৷ ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী কে মশারীর মধ্যে রাখতে হবে।
প্রতিরোধঃ
১. মশার বংশ বিস্তারের স্থান গুলো নির্মূল করবেন কী ভাবে
- বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধার গুলো শুকনো, পানিশূন্য রাখতে হবে ৷ যেসব জিনিসে বৃষ্টি বা বৃষ্টির পানি জমা হয়, যেমন- পুরনো টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন;
- টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখু;
- ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন;
- ফুলদানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
জনস্বাস্থ্য কর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা পরিস্কার করে, নির্মাণ স্থলে বা বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্টের স্থানে স্থিরজল সরিয়ে যাতে পাড়ার লোকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা দেন এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে৷
২. নিজেকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করবেন কীভাবে
- জানালা-দরজায় নেট এবং খাটে মশারি ব্যবহার করুন৷
- দিনের বেলা মশা তাড়াবার ক্রিম, মশারকয়েল, ভেপর ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন৷
ডেঙ্গুপ্রসঙ্গঃ ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু রোগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়,সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গু বেশি হয়। বৃষ্টি কমে গেলেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ইদানীং বেড়ে গেছে।এ সময় জ্বর, পেটের ব্যথা ও অপারেশন দরকার এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সচেতন থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলে ডেঙ্গু হবে না; বলা সহজ হলেও কাজটা করা কঠিন-তবু করতে হবে।চিকিৎসার জন্য প্রথম থেকেই পরিমিত পানি (২৪ঘণ্টায়২•৫-৩লিটার)এবং প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ঔষধ লাগেনা ।প্ল্যাটিলেট এক লাখের কম হলে হেমোরেজিক ডেঙ্গু। হেমোরেজিক হলেই মারাত্মক তা নয়, চিকিৎসা একই। জ্বর চলে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর আর বিপদ থাকে না।বারবার প্ল্যাটিলেট পরীক্ষা করে কোনো লাভনেই, ভয় বাড়ানোর দরকার নেই।আট-দশহাজার প্ল্যাটিলেট প্রায়শই পাওয়া যায় এবং কোনো অতিরিক্ত চিকিৎসা লাগেনা।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ হঠাৎ করে জ্বর। কপালে, গায়ে ব্যথা।চোখে ব্যথা, চোখ নাড়ালে বা এদিক-ওদিক তাকালে ব্যথা । দাঁতের মাঢ়ি দিয়ে রক্তপড়া।পায়খানার সঙ্গে রক্তপড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত অথবা কালো কিংবা লালচে-কালো রঙের পায়খানা, এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত যেতেপারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক। মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হতেপারে। খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতেহবে বিশেষ পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য।
কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণ) জ্বর রক্ত পরীক্ষায় যদি অণুচক্রিকা বা প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়, তবে বুঝতে হবে, এটি হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী জ্বর। রোগীর শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্ত চাপ কমে যাওয়া কিংবা বেশিবেশি প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে।বিশুদ্ধ পানি প্রচুর পরিমাণে পান করাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময় মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ও সারিয়ে তোলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসঃ ভাইরাস জনিত রোগের সাধারণত কোনো প্রতিষেধক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ডেঙ্গু (অভিধান অনুযায়ী ইংরেজি শব্দটির প্রকৃত উচ্চারণ ডেঙ্গি । তবে বহুল প্রচল বলে এই প্রতিবেদনে ডেঙ্গু শব্দটি ব্যবহৃত হলো) একটি ভাইরাস জনিত জ্বর।অন্যান্য ভাইরাল রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে এর মোকাবিলা করাহয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও আপনা আপনি সেরে যায় সাতদিনের মধ্যে। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে এর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে।ডেঙ্গুজ্বর যদি সময়মতো যথাযথ ভাবে মোকাবিলা করা না যায় তবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে,দেখাদেয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গুজ্বর।
কী ঘটেঃ সাধারণত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশার দেহে প্রবেশ করে। সেই ভাইরাসবাহী এডিস মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস তার দেহে ঢুকে পড়ে এবং আক্রান্ত হয় ওই ব্যক্তি। কাজেই ডেঙ্গু ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক আক্রান্তকারী (যাকে প্রাইমারি বাইনডেক্সকেস বলা হয়ে থাকে) শনাক্তকরণ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য খুবই জরুরি। যেহেতু এডিস মশা এই রোগের বাহক তাই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের এলাকা জুড়ে বাড়িবাড়ি মশামারার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।
ডেঙ্গুরের লক্ষণঃ হঠাৎ করে জ্বর,কপালে,গায়েব্যথা, চোখেব্যথা,চোখ নাড়ালে,এদিক ওদিক তাকালে ব্যথা।দাঁতের মাঢ়ি দিয়ে রক্তপড়া।পায়খানার সঙ্গে রক্তপড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত, অথবা কালো কিংবা লালচে-কালো রঙের পায়খানা, এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত যেতে পারে।ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক।মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে বিশেষ পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য।
কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণী) জ্বরঃ রক্ত পরীক্ষায় যদি অণুচক্রিকাবা প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি হেমোরেজিক বা রক্ত ক্ষরণী জ্বর। শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্রব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বেশিবেশি প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট পরিমাণে পান করাতে হবে। সেইসঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলাযায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্ল্যাটিলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগী কেন মারা যায়ঃ অত্যধিক তাপ মাত্রার জ্বরের জন্য দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয় দ্রুত। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশপাশের রক্ত নালিতে চাপ পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ।ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশিমাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যায় কমে যায়। প্ল্যাটিলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে রক্ত ক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় শক সিনড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটে।নেমে আসে অবাঞ্ছিত মৃত্যুর অন্ধকার।
রক্তের কোন পরীক্ষা জরুরিঃ ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করণের, অর্থাৎ জীবাণু পৃথক করণের কোনো পরীক্ষা আমাদের এখানে নেই। রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়।
তবে এটি কোনো নিশ্চিত পরীক্ষা নয়।সাধারণ জ্বর হলেই এটি করার দরকার নেই,কারণ এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা ।সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি)হয় তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি রুটিন পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা বা প্ল্যাটিলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরি। যদি প্ল্যাটিলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয় তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
চিকিৎসাঃ বেশিরভাগ ডেঙ্গুজ্বর ই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়, অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানিপান, বিশ্রাম ও প্রচুর তরল খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ঔষধ। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এ-ই। তবে ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক-জাতীয় ঔষধ দেওয়া যাবেনা। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু, যা খুবই কম হয়ে থাকে, বেশি ভয়াবহ। এতে মৃত্যুও হতে পারে।জ্বর, সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে।
মশা কখন কামড়ায়ঃ ডেঙ্গুমশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। মানে হলো এই, ভোরে সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকবে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে থ্রি-‘ভি ’ব্যবস্থাপনাঃ ডেঙ্গু হবেনা,যদি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকি, দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-অভ্যাস পরিবর্তন করি। ভেক্টর (এডিসমশা),ভিকটিম (রোগী),ভাইরাস (ডেঙ্গুভাইরাস)এই তিন ‘ভি’ ডেঙ্গু-ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এডিস মশা ডেঙ্গুর ভেক্টর বা বাহক।কাজেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজের ঘর,আঙিনায় মশার উৎস ধ্বংস করুন।ফুলের টব,পুরোনো ক্যান বা পাত্র, গামলা,গাছের কোটরে যাতে চার-পাঁচ দিন পানি জমে না থাকে, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।নিজেই উদ্যোগী হোন, কারও আশায় বসে থাকবেন না। মিউনিসিপ্যালিটির জন্য অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যোগে আশ পাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। ভিকটিম অর্থাৎ রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করান। কোথাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পেলে আশপাশের সবাইকে তা জানান এবং এলাকার ঘর বাড়িতে বিশেষ মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করুন। রোগতাত্ত্বিক (এপিডেমিওলজিক্যাল) ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে রোগীর অবস্থান এবং সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে জানান। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ভেক্টর (মশা) এবং ভিকটিম (রোগী) ব্যবস্থাপনা জরুরি। পাশাপাশি ভাইরাসের নিশ্চিত উপস্থিতি নির্ণয়ে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষাগার সুবিধার (ভাইরাস আইসোলেশন ফ্যাসিলিটি) জন্য সরকারি ভাবে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
ব্লাড কম্পোনেন্ট থেরাপিঃ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে প্ল্যাটিলেট বা অণুচক্রিকা আর ডেঙ্গু শক সিনড্রমে প্রয়োজন রক্তরস বা প্লাজমা কিংবা প্লাজমা সাবস্টিটিউট।একব্যাগ (২০০মিলিলিটার)প্ল্যাটিলেট পাওয়ার জন্য পুরো চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সেলসেপারেটর মেশিনের সাহায্যে অবশ্য একজন ডোনারের কাছ থেকেই এই পরিমাণ প্লেটলেট সংগ্রহ করা যায়।
কিন্তু সেল সেপারেটর মেশিন বেশি না থাকায় রেফ্রিজারেটেড সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে সাধারণত ট্রিপল ব্যাগ ব্যবহার করে রক্তের তিন ধরনের কম্পোনেন্ট আলাদা করা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু হয়ে গেলে রক্তের প্রয়োজনটাই বেশি দেখা দেয়, একব্যাগ প্লেটলেটের জন্য চার ব্যাগ রক্ত। কাজেই স্বেচ্ছায় মানবিক তাড়নায় রক্তদান ছাড়া এই চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। সুতরাং ডেঙ্গু প্রতিরোধের পাশাপাশি এর প্রতিকারের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসা জরুরি। জরুরি ল্যাবরেটরিতে সেল সেপারেটর মেশিন আনাটাও।
মৌসুমি রোগঃ
সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে ডেঙ্গুরবাহক এডিস মশা সাধারণত দিনেই বেশি কামড়ায়। সাদা কালো ডোরাকাটা এই মশা আবদ্ধ পানিতে জ্নায়। কিছু পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গুর জীবাণু বাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে সহজেই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ করাযায়। ফুলের টবে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সম্ভব হলে টবের নিচে ছিদ্রযুক্ত প্লেট রাখা ভালো। টবের ওপরের অংশের মাটি আলগা করে দিন, এতে টবে পানি জমবে না এবং মাটির শোষণ ক্ষমতাও বাড়বে।
যে সব গাছ বোতলে রাখা হয়, সে সবের পানি একদিন পরপর বদলিয়ে দিন। গাছের শেকড় ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। কারণ শেকড়ে মশার ডিম লেগে থাকে।
যেসব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে জমানো পানি থাকে, তা নিয়মিত বদলানো ভালো। সেই পানিতে এক সপ্তাহ পরপর একচামচ পেট্রোল ঢেলে নিতে পারেন। এতে মশা বংশ বৃদ্ধি করতে পারবেনা । শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাইরের অংশে ট্রে বা এমন কিছু দেওয়া উচিৎ নয়, যাতে পানি জমতে পারে।– ভাঙা বা অব্যবহৃত বোতল, কৌটা বা যেকোনো পাত্র, ক্যান, আইসক্রিম বা অন্য কিছুর বাক্স, টায়ার, রঙের টিন, নারকেল বা তালের খোসা প্রভৃতি ডাস্টবিনে ফেলেদিতে হবে। যদি এমন হয় যে শিগগির ই ডাস্টবিনে ফেলা যাচ্ছে না, তাহলে সেগুলো ঢেকে রাখুন এবং খেয়াল রাখুন, যেন বৃষ্টির পানি না জমে।
নালা ও বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। পলিথিন ব্যবহার করা এবং বাড়ির আশপাশে পলিথিন ফেলা একেবারেই উচিৎ নয়। এতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে পানি জমে থাকে।
ছাদের জলাধারে সবসময় ঢাকনা ব্যবহার করুন।
নালায় সপ্তাহে একদিন কেরোসিন বা পেট্রোল ঢেলে দিন, এতে মশার লার্ভা মরে যাবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের সাহায্যে মেলাথিয়ন স্প্রে করাতে পারেন। মেলাথিয়নে এডিস মশা মরে। এরপরও ঘরে এডিস মশা ঢুকতে পারে, তাই ঘরের জানালায় নেট ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি, সেখানে দিনের বেলায় ও মশারি ব্যবহার করুন।
শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আশাকরি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে পেরেছি। আশাকরি ওপরের সব তথ্য থেকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।