নতুন রোমান্টিক  ভালোবাসার গল্প 

নতুন রোমান্টিক  ভালোবাসার গল্প 

 

প্রিয় পাঠক, সবাই কেমন আছে। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, নতুন এক রোমান্টিক গল্প নিয়ে। অনেকেই গুগল সার্চ করে থাকেন ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প, নতুন রোমান্টিক গল্প ইত্যাদি। যারা এসব নিয়ে সার্চ করে থাকেন তাদের জন্য পছন্দনীয় একটি গল্প নিয়ে আজকে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে। আশাকরি মনোযোগ সহকারে গল্পটি পড়বেন, এবং তা আপনাদের ভালো  লাগবে আশা করি।

 

নতুন রোমান্টিক  ভালোবাসার গল্প 

 

পরিবারের পছন্দের মেয়ের সাথেই বিয়েটা করেছিলাম। বিয়ের আগে একটা কথাও বলেনি আমার সাথে। পাকা দেখার পরে আমি মাঝে মাঝে ফোন করতাম। সারা রাত একা একা বকবক করতাম তার সাথে । সে হু, হুম,হ্যা, আচ্ছা এই কয়টা শব্দ ছাড়া কোনো কথাই বলতোনা। ইভেন যেদিন আমি ওকে বিয়ে করে নিয়ে আসি সেদিন ও কথা বলেনি। একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। কাঁদেনি পর্যন্ত। মেয়েরা নাকি বাবার বাড়ি ছেড়ে আসার সময় চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনা। কিন্তু ওর চোখে আমি পানি দেখিনি। সেদিন দেখেছিলাম একটা আশা। একটা স্বপ্ন। প্রথমে বারবার মনে হচ্ছিলো তার হয়তো প্রেম ঘটিত কোনো ব্যপার স্যাপার আছে। কিন্তু নাহ্ আমি ভুল ছিলাম। ও স্বভাবতই এমন শান্ত ছিল।

বিয়ের চার বছরের মাথায়ও আমি তার মুখে একটা অভিযোগ শুনিনি আমার বিরুদ্ধে। মাঝে মাঝে মনে হতো, মেয়েটা রক্তে মাংসে গড়া আমাদের মতোই মানুষ তো? কীভাবে পারে কোনো টুশব্দ না করে নীরবে সবার মন রাখতে? ওর ধৈর্য, সহ্য ক্ষমতা বরাবর আমাকে অবাক করেছে। আমাদের বাড়িতে ওর খেয়াল রাখার মতো কেউ ছিলনা, আমি ছাড়া। সারাদিন সবার কাজ করেও দিন শেষে পান থেকে চুন খসলে ওকে ছেড়ে দেওয়া হতোনা। আমি ওকে একান্তে বলতাম।

-“কীভাবে সহ্য করো? চলো আমরা আলাদা হয়ে যাই।” ও শুধু একটা কথা বলতো।

-” আমি সহ্য করিনা তো। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এসব করতে আমার ভালো লাগে। আর কখনো আলাদা হওয়ার কথা বলবা না। আমাকে এই পরিবারের থেকে আলাদা করার কথা আর মুখেও আনবা না। যদি আনো তাহলে কিন্তু কাছে আসতে দেবনা আর। “

আমার মুখ বন্ধ করে দিত। আমি সইতে পারতাম না। সারাদিন বাড়িতে থাকতাম না সত্যি কিন্তু দিন শেষে যখন ওর মুখটা দেখতাম। নিজের ভেতরটা খা খা করে উঠতো। কীভাবে পারে ও এসব? ক্লান্তি মাখা চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে যেত দিন শেষে। তার পরেও তার রেস্ট ছিলনা। বাড়ির প্রতিটা মানুষ না ঘুমানো পযর্ন্ত ওর কোনো ছুটি ছিলনা। তারপর আবার সকালে সবার আগে উঠে রান্না বান্না করত হতো। এক এক জনের জন্য তাদের পছন্দের এক এক রকম রান্না সে প্রতিদিন ই করতো কোনো অভিযোগ ছাড়া। ওকে দেখে মনে হতো এটা মানুষ না। রোবট। তারপরেও তাকে বাচ্চা নিয়ে প্রতিদিন খোঁটা দেওয়া হতো। বিয়ের চার বছর পরেও কোনো বাচ্চা ছিলনা আমাদের। ওর বয়সটা বাচ্চা নেওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিলনা তখনো। ও অবশ্য মাঝে মাঝে বলতো,

-” আমাকে কী একটা বাবু উপহার দেওয়া যায়না এখন? তোমার মতো ছোট্ট একটা বাবু থাকবে আমার কাছে। সারাদিন তো তোমাকে পাইনা। একটা বাবু যদি দাও সে আমার সাথে থাকবে সব সময়। “

কিন্তু আমি তার বয়সের কথা ভেবে কিছু করিনি। এমন না যে আমার সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা নাই। আছে অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাচ্চার থেকে আমার বেশি প্রিয় ছিল আমার ছোট্ট বউটা। অপরিপক্ক বয়সে ওকে এতো বড় দায়িত্ব দিয়ে আমি ওর জীবন ঝুকিপূর্ণ করতে চাইনি। কিন্তু কী করে বুঝবো? আমি সাথে থাকতেই ও জীবনের সব থেকে বড় আর সর্ব শেষ ঝুঁকিতে পড়বে? ওকে আমি সারাজীবন আমার সাথে চাইতাম। কিন্তু ধরে রাখতে পারলাম না। আমাকে একা রেখে সে চলে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। যেখান থেকে আমি ওকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না।

বিয়ের পরে আমি ওকে সাথে নিয়ে ওর বাবার বাড়িতে বেশি যেতে পারিনি। বিয়ের কয়টা দিন পরে গিয়েছিলাম আর বছরের দুইটা ঈদের একটা ইদে যেতাম। এছাড়া আর যাওয়া হতোনা। ওর বাবার বাড়ি থেকেও ওকে নেওয়ার কোনো আগ্রহ ছিলনা সেখানে আমি তো পরের ছেলে। ঘরে সৎ মা। বাবা ছ-বছর আগেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। নিজের একটা ভাই নেই। যে ছিল সে ছোট বেলায় ই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। তাই তাকে আদর করে ডেকে একটু আপ্যয়ন করার সময় কারো হয়নি। একটা সময় ও নিজেই আর যেতে চাইতো না। কিন্তু সেদিন আমি বাসায় আসার পরে করুন কন্ঠে একটা কথা বলেছিল,

-” আমাকে একটু বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবে ? আমি তোমার কাছে কখনো কোনো আবদার করিনি। আমি বাবার কবরটা একটু দেখবো। আমাকে একটু নিয়ে চলো তুমি প্লিজ। “

ওর আবদারে কী যেন ছিল সেদিন। বুঝতে পারিনি এটাই শেষ আবদার ছিল। ওকে বলেছিলাম সকালে নিয়ে যাব। মেয়েটার মুখটা তখন দেখার মতো ছিল। তাকে শেষবার খুশি হতে আমি তখন দেখেছিলাম। গোমড়া মুখে একটুখানি হাসির ঝলক যে প্রান জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটাই যে আমার শেষ দেখা হবে আমি কি আগে বুঝতে পেরেছি?

পরদিন সকালে ওকে বাইকে করে নিয়ে রওনা হয়েছিলাম ওর বাবা বাড়ির উদ্দেশ্যে। একটা ট্রেন লাইনের সামনে এসে দাড়িয়ে ছিলাম। এখনি ট্রেন আসবে। স্টেশন মাস্টার সবাইকে আটকে রেখেছে। কিন্তু একটা যুবক ছেলে ঠিক তখন প্রচণ্ড বেগে ট্রেন আসার আগে লাইন ক্রস করার জন্য আসছিল। ট্রেন চোখের সামনে চলে এসেছে ঠিক তখনি আমার মনেহলো আমার পিছনে থাকা মানুষটাকে কেউ টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে চলে গেছে। মূহুর্তের মধ্যে সেই ছেলেটা তার বাইক সমেদ লাইনের ওপারে পড়লো আর আমার মানুষটা পড়লো রেল পাতের উপরে। কিছু বুঝে উঠার আগেই চারিদিকে র’ক্ত ছিটে পড়লো। তাল সামলাতে না পেরে আমি মনেহয় পড়ে গেছিলাম। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটা শব্দ পাচ্ছিলাম শুধু। সিগন্যাল ছাড়া রেডিও যেমন পুউউউউ করে বাশি বাজায় ঠিক তেমন শব্দ হবে হয়তো। আশপাশের লোকজন সবাই দৌড়ে গেল সেদিকে। আমি নড়ার শক্তিটুকুও পেলাম না। ততোক্ষনে আমার মানুষটা আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। জ্ঞান ধরে রাখতে পারিনি তখন। পরে যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালের বেডে। বাড়ির সবাই এসেছে হাসপাতালে। আমি ওই পিচ্চি মেয়েটার কথা জিজ্ঞাসা করতে তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। আমি আগেই বুঝেছিলাম ও নেই। আমাকে আর ওর বডিকে এই হাসপাতালেই আনা হয়েছে। আমি তাকে দেখতে চাওয়ার আবদার করলে আমাকে বলা হলো, তার মাথা নাকি নাই। গুড়িয়ে গেছে। আমি নাকি দেখে সহ্য করতে পারবোনা।

নিজেকে তখন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানুষটা মনে হচ্ছিলো। আমি থাকতে আমার প্রিয় মানুষটার এ কী হয়ে গেল। তাও কোনো অভিযোগ ছাড়াই চলে গেল। আমাকে একা রেখে। একা ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। জীবনে একটা মাত্র আবদার করেছিল। সেটা পূরণ হওয়ার আগেই আমাকে দায়ী করে চলে গেল।  আফসোস থেকে গেল আমার। তাকে পেয়ে গেছি ভেবে জীবনেও তাকে বলা হয়নি সেই কথাটা। যে কথাটা একটা মেয়েকে শক্তি দিতে পারে। নতুন প্রাণ দিতে পারে। জীবনেও তাকে ভালোবাসি বলা হয়নি। আর কখনো বলাও হবেনা। এখন একটাই চাওয়া শুধু। আল্লাহ যেন তাকে এবার একটু শান্তি দেয়। ও চলে গেছে ছয় মাস হয়েছে। বাসা থেকে আবার বিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি ওর জায়গাটা কাউকে দিতে চাইনা। তাই সবটা ছেড়ে চলে এসেছি। আমার মানুষটার কিছু স্মৃতি নিয়ে। জীবনের শেষ সময়টা পযর্ন্ত এই স্মৃতি গুলোই আমার অবলম্বন।

সব শেষে একটা কথা, আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসা সুন্দর।

#সমাপ্ত