সুন্দর রোমান্টিক গল্প

সুন্দর রোমান্টিক গল্প

 

প্রিয় পাঠক, সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজ আমরা আপনার সামনে হাজির হয়েছি সুন্দর রোমান্টিক গল্প  নিয়ে। অনেকে আছেন যারা ইন্টারনেটে সার্চ করে ভালো গল্প খুঁজে পান না তাদের জন্যই মূলত আজকের এই গল্পটি। মনোযোগ সহকারে গল্পটি পড়লে আপনাদের অবশ্যই ভালো  লাগবে ।

 

 

সুন্দর রোমান্টিক গল্প

 

ভার্সিটি থেকে এসে ঘরে ঢুকতেই বড় ফুপি বলল, ওড়নাটা মাথায় টেনে তাড়াতাড়ি এদিকে আয় তো একটু। কথার ভাবেই বুঝলাম বাড়িতে কেউ এসেছে। বড় ফুপি আমার হাতে শরবতের ট্রে টা ধরিয়ে দিয়ে বলল, বসার ঘরে যা। আমি যাব না বলে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। ফুপি আমাকে টেনে নিয়ে যাবার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। পরিশেষে পাত্রপক্ষকে মিথ্যে বলে তাড়াতে হলো। ফুপি ভীষণ ইতস্তত হয়ে তাদেরকে বলল, মেয়ে আসলে সিড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। আমি ভীষণ দুঃখিত আজকে পাত্রীদেখা হচ্ছে না।

আমি ভাবলাম ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু না, এই ছেলে তো ভীষণ চালাক। সে উল্টো বলল, ইট’স ওকে আন্টি। ইট’স টোটালি ওকে। উনি সুস্থ হলে না হয় আমরা একটা কফিশপে বসে আলাপ করে নেবো। ইউ ডোন্ট ওরি।

পাত্রের বাবা-মা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু ফুপি শুরু করলো তান্ডব। মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ করে চিল্লাচিল্লি করছে। কিছুক্ষণ পর মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল, সমস্যা কী তোর? এমন করলি কেন? তোর জন্য তোর ফুপিকে মিথ্যা বলতে হলো।

আমি রাগটাকে সামলে নিয়ে বললাম, ফুপি যে আমাকে মিথ্যে বলে ভার্সিটি থেকে নিয়ে এলো সেবেলায় কোনো দোষ নেই!! যাকে বিয়ে দেবে তাকে না জানিয়েই পাত্রপক্ষকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসছো তোমরা। তাহলে এখন কেন আমাকে কথা শোনাচ্ছো? আর এই ছেলেটা এত বদের হাড্ডি কেন? সে বুঝতে পারলো না যে, এটা একটা এক্সকিউজ ছিল। সে বুঝলো না যে, মেয়েটা তাকে বিয়ে করতে চায় না বলে পায়ের ব্যাথার বাহানা দিচ্ছে। এ্যাহ! ইট’স টোটালি ওকে, ইউ ডোন্ট ওরি, আমরা কফিশপে মিট করে নেবো শখ কত এ্যাহ!! যাব না আমি এরকম বদের হাড্ডি ছেলের সাথে দেখা করতে।

ফুপি মাকে বলল, তোর মেয়েকে বোঝা। ছেলেটা ভীষণ ভালো। নামকরা অস্টিওপ্যাথ।

আমি রাগি স্বরে বললাম, অস্টিওপ্যাথ! তাহলে আমার পায়ের ব্যাথার কথা শুনে উনি ট্রিটমেন্ট করতে চাইলো না কেন? এরকম ডাক্তার তো জীবনে দেখিনি। অসুস্থ রোগীর কথা শুনেও সে চিকিৎসা না করে চলে যায়। নিশ্চয়ই এ কোনো হাতুড়ে ডাক্তার হবে। এরা তোমাকে বোকা বানাচ্ছে ফুপি। দুনিয়ায় কত রকমের চিটার বাটপার আছে জানো তুমি!!

ফুপি এবং মা দুজনেরই মেজাজ তুঙ্গে। কেউ আর কিছু বলল না। রাতে একটা অচেনা নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন এলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল, কাল একবার কফিশপে আসতে পারবেন?

বুঝলাম সেই বদের হাড্ডিটা ফোন করেছে। আমি ডিরেক্ট বললাম, দেখুন আমি অসুস্থ। পায়ে ভীষণ ব্যাথা। আপনার সাথে দেখা করা সম্ভব নয়। আর হ্যাঁ আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?

যে আপনাকে পেতে চলেছে তার কাছে আপনার নাম্বার পাওয়া তেমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।

ওয়েট ওয়েট! কী বললেন আপনি? আমাকে পেতে চলেছেন? হাউ ফানি! আমাকে পাওয়া কী এতোই সোজা? বললাম আর পেয়ে গেলাম। কী মনে করেন আপনি নিজেকে! হাতুড়ে ডাক্তার একটা।

আপনি কী করে জানলেন আমি হাতুড়ে ডাক্তার? আমি কি আপনার ট্রিটমেন্ট করেছি? সন্দেহ থাকলে একবার আমাকে দিয়ে আপনার পায়ের ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন।

আমি রাগি স্বরে বললাম, কোনো দরকার নেই আমার আপনার ট্রিটমেন্টের।

হ্যাঁ শুধু শুধু ট্রিটমেন্টের কী দরকার বলুন!

আপনি ফোনটা রাখুন তো। ওহ আপনি কেন রাখবেন। আপনি তো খেজুরে আলাপ করার জন্যই ফোনটা করেছেন। আমিই রাখছি।

পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে দেখলাম একজন বুড়ির চুল বিক্রি করছে মানে হাওয়াই মিঠাই৷ দেখা মাত্রই কিনতে গেলাম। একজন ভদ্রলোক এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। বলল, মামা যা হাওয়াই মিঠাই আছে সব দিয়ে দিন।

আমি ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকালাম। বাব্বাহ! সব বুড়ির চুল কিনে নিয়ে যাবে! কিন্তু এত বুড়ির চুল দিয়ে কী করবে উনি? একা একা সব খাবে!

মামা বলল, এতো গুলান দিয়া কী করবেন স্যার?

ভদ্রলোক বলল, আমার হাসপাতালের অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য নিয়ে যাব। হাত-পা ভেঙ্গে বাচ্চাগুলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে ভীষণ বোর হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম বাচ্চাগুলোকে একটু খুশি করে দেই।

বাহ! ডাক্তারদের মনও এত নরম হয়! সারাদিন ডাক্তারি করতে করতে মানুষ তো একদম রোবট হয়ে যায়। এত কিছু ভাবার সময় কই আর তাদের। কিন্তু ইনি তো একদমই আলাদা। দেখতে শুনতেও বেশ হ্যান্ডসাম আর মনটাও ভীষণ ভালো। এরকম একটা ডাক্তারকে খুঁজে আনতে পারলো না ফুপি!! একটা বদের হাড্ডি মার্কা হাতুড়ে অস্টিওপ্যাথ নিয় চলে এলো আমার সাথে বিয়ে দিতে হুহ!

মামা বলল, আপনে তো মেলা ভালা মানুষ। এমন মানুষ আইজকাল দেহাই যায় না। মানুষ তো কয় ডাক্তাররা কষাই হয়। না মানে লোকজনদের মুখে শুনছি আর কী। কিছু মনে কইরেন না। কিন্তু আপনেরে দেইখা আমার ধারনাই বদলায় গেল।

লোকটা হাসতে হাসতে আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি এ কথা বলছেন! অথচ অনেকেই আমাকে হাতুড়ে ডাক্তার মনে করে।

একথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ইনিই সেই অস্টিওপ্যাথ!! যে আমাকে দেখতে এসেছিলো।

আমি বললাম, আপনিই……

সে বলল, জ্বি আমিই। ইফতি রহমান ওরফে হাতুড়ে অস্টিওপ্যাথ। আচ্ছা আপনার পায়ের ব্যাথা ঠিক হয়ে গেছে? এত দ্রুত কী করে ব্যাথা সেরে গেল? আই মিন কাল তো আপনি আমার সাথে দেখাই করতে চাইছিলেন না।

ইয়ে মানে হ্যাঁ ব্যাথা তো আছে। এখনও হালকা ব্যাথা আছে।

মনে মনে বললাম, এই ডাক্তারটা তো মহা বদ। ঠিক বুঝে গেছে আমি মিথ্যে বলেছি।

ইফতি বলল, আচ্ছা তাহলে চলুন একটা ভালো বড় ডাক্তার দেখিয়ে নেয়া যাক। না মানে আমি তো হাতুড়ে। আর শরীর খারাপ নিয়ে অবহেলা করতে নেই।

আমি মৃদু স্বরে বললাম, চোখের সামনে ডাক্তার থাকতে অন্য কোথাও কেন যেতে হবে।

তো আপনি তাহলে আমাকে ভালো ডাক্তারের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন?

উমহুম। শুধু ভালো ডাক্তারের সার্টিফিকেট নয়। সারাজীবন এই পেসেন্টের ট্রিটমেন্ট করার দায়িত্ব দিচ্ছি।

 

শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আশাকরি গল্প টি করে আপনারা মজা পেয়েছেন। এরকম আরো মজার মজার গল্প পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।  এরকম সুন্দর রোমান্টিক গল্প পেতে কমেন্ট মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।