বেস্ট রোমান্টিক গল্প 

বেস্ট রোমান্টিক গল্প 

বেস্ট রোমান্টিক গল্প 

 

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি বেস্ট রোমান্টিক গল্প  নিয়ে। আপনারা অনেকেই আছেন যারা ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন বেস্ট রোমান্টিক গল্প, মূলত তাদের জন্যই আজকের পোস্টটি। মনোযোগ সহকারে গল্পটি পড়বেন আশা করি ভালো লাগবে। 

 

শ্যামলা বউকে নিয়ে বাস কাউন্টারে বসে আছি গাড়ির অপেক্ষায়। বিয়ে করেছি একবছর হয়েছে।ভাই বোনদের সবার থেকে বেশি ফর্সা আমি। যাকে বলে দুধের মতো সাদা। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল ঢাকার দুই ভাইয়ের এক বোন যে থাকবে তেমন মেয়েকেই বিয়ে করবো। করেছিও তাই। কাজের সূত্রে ঢাকায় যাওয়া। সেখানে এক বন্ধুর বাড়ি হাজারীবাগ। একদিন কাজ না থাকায় দুজন আড্ডা দিতে গিয়ে গভীর রাত করে ফেলি। সেদিন আর মেসে না যেয়ে বন্ধুর বাসায় ঘুমাই। ‌সকালে উঠে বাড়ি থেকে বের হতে যাব তখনই চোখ পরে কোকরা চুল ওয়ালা শ্যামলা দেখতে, কালো সুতীর শাড়ী পড়া একটি মেয়েকে। আর দশটা মেয়ের মতো এই মেয়ে চোখে কাজল দেয়নি! দেয়নি ঠোঁটে রং। একদম সাদাসিদে।

বন্ধুকে বলে মেয়ের ব্যাপারে খবর নিলাম। ফ্যামিলি, ব্যবহার, মেয়ে, মনে মনে যেমন চাইতাম আল্লাহ যেনো আমাকে ঠিক তেমনই মিলিয়ে দেন। গ্ৰামে গিয়ে মার থেকে অনুমতি নিয়ে মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বললাম। মেয়ের পরিবার রাজি। এগারো দিনের মধ্যেই বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে করে ফেলি।। 

 

ঢাকায় থাকি আমি মেসে। কাজ করে যা টাকা পাই সব গ্ৰামেই পাঠাতে হয়। বউকে তো আর মেসে রাখা যায় না। মা ফোন করে বলেছে বউকে যেনো গ্ৰামের ঘরে আগে নেই। আমিও নিয়ে গেলাম। বেশ ভালোই দিনকাল কাটলো। দুই সপ্তাহ পর বউকে গ্ৰামে মার কথায় রেখেই আবার ঢাকায় ফিরে আসি আমি। গ্ৰামে নেটওয়ার্ক তেমন ভালো না তাই প্রতিদিন কথা হতো না শ্যামলা বউয়ের সাথে। 

 

একদিন আমার চাচাতো ভাই ফোন দেয়। খুব অবাক হয়েছিলাম, কারণ তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো না। যাই কিছু হয়ে যাক তারা নিজ থেকে কখনো কল দিবে না। না চাইতেও কল রিসিভ করি। ‌তারপর সে যা বললো তা বিশ্বাস করা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক বিষয়। সে বললো, মা নাকি আমার বউকে বকাঝকা করে। ছোট ভাই নাকি আমার বউয়ের গায়ে হাত উঠায়। এগুলো বিশ্বাস করা সত্যি খুব কষ্টের। আমি বিশ্বাস করিনি আমার ভাই মা কেমন তা আমি জানি। 

দুদিন পর রাতে আবারো চাচাতো ভাইয়ের কল। বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে আমি অবাকের চরম পর্যায়। চাচাতো ভাই কেঁদে বলছে আমি যেনো তাড়াতাড়ি গ্ৰামে আসি। কেনো যেনো মনটা অস্থির হয়ে গেলো। যত দ্রুত সম্ভব মেস থেকে বের হয়ে গাবতলী গিয়ে ঠাকুরগাঁও এর টিকেট কেটে গাড়িতে চরলাম। 

রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকার কারনে বাড়ি পৌঁছাতে দুপুর একটা বাজে। বাড়ির সামনে আসতেই শুনতে পারি আমার শ্যামলা বউয়ের চাপা কান্নার স্বর। বাড়ির মেন গেটের সামনে তাজ্জব হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি আমার মার ভিন্ন রুপ। 

মা খুব জোরে আমার শ্যামলা বউয়ের কোকড়ানো ঢেউ খেলা চুল মুঠি বদ্ধ করে রেখেছে। আর বলছে, ‘ওই বিদেশীনি জলদি ক আমার চান্দের মতো সুন্দর পোলার তোর মতো কালি বেডিরে বিয়া করবো কে? কি তাবিজ করছস ক তুই নাইলে এক্কেবারে তোর জান কবজ কইরা দিমু। কুনোদিন হুনছস সাদা পোলায় কালা মাইয়া বিয়া করে? কি তাবিজ করছস ক!’ এমন আরো নানা রকম কথা বলছে। বিশ্রী বিশ্রী কয়েকটা গালিও দিচ্ছে। মা আমার বউয়ের শ্যামল‌া রঙ নিয়ে এমন করছে অথচ ওর এই শ্যামলা রঙটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার সারা শরীর ঠান্ডা অনুভব হচ্ছিলো তখন। আমি মেন গেট থেকে একটু পিছে চেপে এলাম। পকেট থেকে ফোন বের করে ছোট ভাইয়ের নাম্বারে কল দিলাম। ছোট ভাই কল ধরে এই সেই জিজ্ঞাস করলো। আমার শ্যামলা বউয়ের কথা উঠালেই থামিয়ে দিচ্ছে। আমি ধমক দিয়ে বললাম ও’কে ফোন দিতে। বউ ফোন ধরে চুপ করে আছে। তারপর আমি প্রশ্ন করলাম, ‘কি করছ?’ বউ স্বাভাবিক ভাবে বললো, ‘রান্না করছি।’ আমি ফোনটা কেটে দিলাম‌। বাড়ির ওপাশে দাঁড়িয়ে মানুষজন বউয়ের মার খাওয়া দেখছে কিছু বলছে না দেখে হাসলাম একটু। চাচাতো ভাইকে কল দিলাম তার সাথে কথা বলে তাদের বাড়িতেই আজ উঠলাম। এখন আমি বাড়ি যাব না, আরেকটু পর যাব। এক ঘন্টা পর আমাদের বাড়ির চিল্লাচিল্লি কমলো। এই সময় সবাই খেতে বসে। আমি উঠে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে দেখি ছোট ভাই একটা বাটি আমার শ্যামলা বউয়ের মাথার উপর ছুড়ে মারলো। 

হঠাৎ আমাকে দেখায় ভাই এবং মা দুজনই কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আমার কাছে এসে নানারকম মিথ্যা বানোয়াট কথা বলতে থাকে বউকে নিয়ে। শ্যামলা বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে। আমি কাছে গিয়ে নিজের শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় লাগাই। এই থাপ্পড় টা ছিল ওর নীরবতার জন্য। মা আর ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘ভালো থেকো মা। আমার বউকে সহ্য করতে তোমার কষ্ট হচ্ছে আগেই বলতে পারতে আমি তোমাকে বেছে ওকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তুমি তা না করে যা করেছ তার জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে ওকে বেছে নিলাম।’ 

 

তখন ওই অবস্থাতে শ্যামলা বউকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম সেই বাড়ি থেকে যেখানে আমার ভালবাসাকে অসম্মান করা হয়েছে। এখন একই অবস্থায় বাস কাউন্টরে বসে ভাবছি শ্যামলা বউকে নিয়ে একাই আমি সুখের রাজ্যে পাড়ি জমাবো। একটু পর টের পেলাম আমার কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়েছে শ্যামলা বউটা। আমি খুব যত্ন করে ওর কপালে একটা চুমু খেলাম। শ্যামলা বউয়ের পানে তাকালাম! ওর চোখে আমার জন্য দেখতে পেলাম অনেক ভালোবাসা, অনেক শ্রদ্ধা, অনেক বিশ্বাস।

 

সমাপ্ত

 

#শ্যামলা_বউ

শেষ কথাঃ প্রিয় পাঠক, আমরা বেস্ট রোমান্টিক গল্প গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশাকরি গল্পটি পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে। নিয়মিত নতুন নতুন বেস্ট রোমান্টিক গল্প  পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *